ভগরথা দেবী কেরালার জনপ্রিয় মাতৃরূপ দেবী ও ত্রিশূর-পূরামের ঐতিহ্য

পোস্ট টি ভালোলাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না

ভগরথা দেবী কেরালার জনপ্রিয় মাতৃরূপ দেবী ও ত্রিশূর-পূরামের ঐতিহ্য

ভগরথা দেবী কে?

ভগরথা দেবী বা ভগবতী দেবী  হলেন হিন্দু ধর্মের এক শক্তিশালী মাতৃরূপ, যিনি মূলত কেরালায় গভীর ভক্তি ও শ্রদ্ধার সঙ্গে পূজিত হন। দক্ষিণ ভারতের শাক্ত উপাসক সম্প্রদায়ের মধ্যে তিনি অন্যতম প্রধান দেবী রূপ। “ভগবতী” শব্দের অর্থ ‘ঈশ্বরী’ বা ‘স্ত্রী-সত্তার সর্বোচ্চ রূপ’। কেরালার প্রতিটি অঞ্চলে ভগরথা দেবীর আলাদা আলাদা রূপে পূজা প্রচলিত, যেমন—ভদ্রকালী, দুর্গা, রাজরাজেশ্বরী ইত্যাদি। তাঁকে শক্তির দেবী হিসেবে মানা হয়, যিনি অসুর বিনাশিনী ও ভক্তরক্ষা কর্তা।

ভগরথা দেবী কেবল ধর্মীয় উপাসনার কেন্দ্রে নন, বরং কেরালার সংস্কৃতি, উৎসব ও নারীশক্তির প্রতীক হিসেবেও গণ্য হন। তাঁর আশীর্বাদ লাভের আশায় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ভক্তরা উপবাস, ব্রত ও বিশেষ পূজা পালন করে। দক্ষিণ ভারতের শক্তিপীঠসমূহ ও উৎসবগুলিতে ভগরথা দেবীর উপস্থিতি এক ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক চেতনার ধারক।

দেবীর অন্যান্য নাম ও রূপ

ভগরথা দেবী বহু রূপে ও বহু নামে পূজিত হন, যা তাঁর অসীম শক্তি ও সর্বব্যাপী মাতৃত্বের প্রতীক। কেরালায় তিনি সাধারণত ভগবতী (Bhagavati) নামে পরিচিত হলেও, ভক্তসমাজের বিশ্বাস অনুযায়ী তিনি কখনো দুর্গা, কখনো ভদ্রকালী, আবার কখনো রাজরাজেশ্বরী, ত্রিপুরসুন্দরী, কাঞ্জিরমাট্তম দেবী অথবা কোট্টায়ম দেবী রূপে আবির্ভূত হন।

প্রতিটি অঞ্চলের ভগবতী দেবীর মূর্তিতেই থাকে ভিন্ন ভিন্ন ভঙ্গি, অস্ত্র ও অভিব্যক্তি, যা স্থানীয় ইতিহাস, লোককথা এবং ভক্তদের অনুভূতির সঙ্গে জড়িত। কোথাও তিনি শান্ত ও স্নেহময়ী মা, আবার কোথাও তিনি রুদ্ররূপিনী অসুরনাশিনী। এই বৈচিত্র্যময় রূপ-রূপান্তরই ভগরথা দেবীর অসীমতা এবং শক্তির প্রকাশ বলে মানা হয়।

দক্ষিণ ভারতের শাক্ত ও তন্ত্র সাধকরা তাঁকে শক্তির চূড়ান্ত রূপ, বা মহাশক্তি হিসেবে মান্য করে থাকেন। এইভাবেই তিনি একাধারে মা, রক্ষা কর্তা, যুদ্ধদাত্রী ও করুণাময়ী ঈশ্বরীর রূপ ধারণ করেন — প্রতিটি ভক্তের চাহিদা অনুযায়ী।

 ইতিহাস ও উৎস

ভগরথা দেবীর উপাসনা একটি প্রাচীন ও গভীর ঐতিহ্যবাহী ধারার অংশ, যার শিকড় ছড়িয়ে রয়েছে দক্ষিণ ভারতের শাক্ত ধর্মাচারে ও লোকজ সংস্কৃতিতে। ইতিহাসবিদদের মতে, ভগরথা বা ভগবতী দেবীর পূজার সূচনা হয়েছিল খ্রিস্টীয় প্রথম সহস্রাব্দের পূর্বেই, যখন মাতৃতত্ত্ব-ভিত্তিক উপাসনা ভারতীয় উপমহাদেশে ক্রমশ প্রসার লাভ করছিল।

কেরালার প্রাচীন মন্দির ও পামপাতার পুঁথিতে পাওয়া উল্লেখ অনুযায়ী, ভগবতী দেবীকে শক্তির উৎস ও মহামায়ার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হত। তিনি ছিলেন সেই আদিশক্তি, যিনি সৃষ্টিকে রক্ষা ও ধ্বংস উভয়ই করতে সক্ষম। কেরালার অনেক ঐতিহাসিক মন্দির যেমন কোডুংগাল্লুর ভগবতী মন্দির, চোটানিকারা মন্দির, এবং আত্তুকাল ভগবতী মন্দির—এই দেবীর উপাসনার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রস্থল ছিল এবং আজও রয়েছে।

শক্তি আরাধনার এই ধারা অনেকটাই তান্ত্রিক ধর্মাচার ও লোকসংস্কৃতির সংমিশ্রণে গড়ে উঠেছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, স্থানীয় উপজাতিদের মাতৃদেবীর উপাসনা সময়ের সঙ্গে ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির মধ্যে মিশে গিয়ে ভগবতী উপাসনার রূপ নিয়েছে।

ঐতিহাসিকভাবে, বিভিন্ন রাজবংশ যেমন চের রাজবংশজমোরিন রাজারা ভগরথা দেবীর পূজায় অর্থ ও জমি দান করতেন। বিশেষত ত্রিশূর ও তার আশপাশের অঞ্চলে দেবীর উপাসনা সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছিল।

এইভাবে ভগরথা দেবী কেরালার ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং আধ্যাত্মিক জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত হয়ে আজও সমান জনপ্রিয়তা ও ভক্তি লাভ করে চলেছেন।

প্রধান উপাসনাস্থল

কেরালার বিভিন্ন অঞ্চলে ভগরথা দেবীর উপাসনার জন্য বহু প্রাচীন ও জনপ্রিয় মন্দির রয়েছে, যেগুলো ভক্তদের জন্য বিশেষ ধর্মীয় গুরুত্ব বহন করে। এই মন্দিরগুলো কেবল উপাসনার কেন্দ্র না, বরং কেরালার সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের অংশ।

কোডুংগাল্লুর ভগবতী মন্দির
কেরালার অন্যতম প্রাচীন ও বিখ্যাত ভগবতী মন্দির কোডুংগাল্লুর ভগবতী মন্দির। এখানে দেবীর মূর্তিটি ভগবতী বা দুর্গার রূপে পূজিত হয়। এই মন্দিরে প্রতিবছর বিশাল উৎসব ও পূজা অনুষ্ঠিত হয়, যা স্থানীয় মানুষের পাশাপাশি বহু পর্যটক ও ধর্মযাত্রীকে আকর্ষণ করে।

চোটানিকারা ভগবতী মন্দির
চোটানিকারায় অবস্থিত এই মন্দিরটি কেরালার অন্যতম প্রধান শক্তিপীঠ হিসেবে বিবেচিত। এখানে দেবীকে ভগবতী, ভদ্রকালী ও দুর্গার রূপে পূজিত করা হয়। বিশেষ করে নাড়িয়াল খোলার মাধ্যমে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়, যা একটি ঐতিহ্যবাহী রীতি।

আত্তুকাল ভগবতী মন্দির
কেরালার অন্যতম প্রাচীন মন্দিরগুলোর মধ্যে একটি হল আত্তুকাল ভগবতী মন্দির। এটি ত্রিশূর জেলার কাছে অবস্থিত এবং এখানে দেবীর পূজার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

ত্রিশূর-পূরাম মন্দিরসমূহ
ত্রিশূরের বিভিন্ন মন্দিরেও ভগবতী দেবীর পূজা বিশেষ গুরুত্ব পায়, বিশেষত ত্রিশূর-পূরাম উৎসবের সময়। এই সময় ভগবতী দেবীর মূর্তি ও মন্দিরগুলি বিশেষ সজ্জায় আচ্ছাদিত হয় এবং বিশাল জনসমাগম হয়।

এই মন্দিরগুলো ছাড়াও কেরালার ছোট-বড় বিভিন্ন অঞ্চলে ভগরথা দেবীর বহু মন্দির ও উপাসনাস্থল রয়েছে, যেখানে বছর জুড়েই ভক্তরা নিয়মিত পূজা ও উপাসনা করেন।

ত্রিশূর-পূরাম উৎসব

ত্রিশূর-পূরাম কেরালার অন্যতম বৃহত্তম ও বর্ণময় ধর্মীয় উৎসব, যা মূলত ভগরথা দেবীকে কেন্দ্র করে আয়োজিত হয়। প্রতি বছর বৈশাখ মাসে (এপ্রিল-মে) ত্রিশূরের বিখ্যাত বদ্রকালী অরATTুপুরম দেবী ও পারমেক্কাভু ভগবতী মন্দির-সহ বিভিন্ন দেবীর মন্দির থেকে বের হওয়া দেবীমূর্তিগুলির মিলন ঘটে এই মহাউৎসবে।

এই উৎসবের মূল আকর্ষণ হল —
🔸 দর্শনীয় শোভাযাত্রা (Elephant Procession): সুসজ্জিত হাতির সারি, তাঁদের মাথায় রঙিন ছাতা (কুডম), কলা ও সোনা-রুপার অলংকার;
🔸 চেন্ডা মেলাম (Chenda Melam): ঐতিহ্যবাহী কেরালার ঢাক, করতাল ও নাদস্বরম বাজনার মহাসমারোহ;
🔸 আতশবাজি (Fireworks Display): রাতব্যাপী চলা চোখ ধাঁধানো আলোর খেলা যা কেরালার আকাশকে রাঙিয়ে তোলে।

উৎসবের অন্যতম বিশিষ্ট রীতি হল কুডমট্টম, যেখানে একের পর এক ছাতা পরিবর্তনের প্রতিযোগিতা হয় — যা ভক্তদের উচ্ছ্বাসে পূর্ণ করে তোলে।

এই উৎসবে অংশ নেয়া মন্দিরগুলোর মধ্যে প্রতিটি মন্দিরই নিজের দেবীমূর্তি নিয়ে বিভিন্ন সাজে ও ঢঙে মিছিল করে মেলায় অংশ নেয়। পারস্পরিক সৌহার্দ্য, ভক্তি ও সংস্কৃতির মিলনমেলাই হয়ে ওঠে এই ত্রিশূর-পূরাম।

ত্রিশূর-পূরাম কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয় — এটি কেরালার আত্মপরিচয়ের প্রতীক, যেখানে ভগরথা দেবীর উপস্থিতি ও আশীর্বাদ ভক্তদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।

পূজার রীতি ও প্রথা

ভগরথা দেবীর পূজার রীতি ও প্রথাগুলো কেরালার শাক্ত ধর্মাচার ও লোকসংস্কৃতির এক অসাধারণ মিশ্রণ। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, সঠিক নিয়মে ও ভক্তিভরে পূজা করলে দেবী আশীর্বাদ প্রদান করেন, কষ্ট দূর করেন এবং কল্যাণ করেন।

🔹 প্রাত্যহিক পূজা (Daily Rituals):
প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় ভগরথা দেবীর পূজা করা হয়। পূজায় ব্যবহৃত হয় ফুল (বিশেষ করে চাম্পা ও থুলসী), ধূপ, প্রদীপ, কলা, নারকেল, এবং চাল। মন্দিরের পুরোহিতরা বৈদিক মন্ত্র ও শাক্ত তন্ত্রমন্ত্রের মাধ্যমে পূজা পরিচালনা করেন।

🔹 শুক্রবারের বিশেষ পূজা:
কেরালায় প্রতিটি শুক্রবার ভগরথা দেবীর জন্য বিশেষ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই দিনে বহু নারী উপবাস করে দেবীর ব্রত পালন করেন। অনেক ভক্ত দেবীর সামনে নারকেল ফাটিয়ে মনোস্কামনা ব্যক্ত করেন।

🔹 অরATTু (Aarattu) বা দেবীর স্নান:
উৎসবের সময় একটি বিশেষ পূজা হয় যাকে “অরাট্টু” বলা হয় — যেখানে দেবীর মূর্তিকে বিশেষভাবে স্নান করিয়ে বিসর্জনের মতো মিছিল সহকারে নদী বা পুকুরে নিয়ে যাওয়া হয়।

🔹 নীয়োমবদ্ধ উপবাস ও ব্রত:
বিভিন্ন সংকটের সময় বা সন্তানপ্রাপ্তি, রোগমুক্তি, পরীক্ষায় সাফল্য প্রভৃতি কামনায় ভক্তরা নির্দিষ্ট দিন বা মাস ধরে উপবাস পালন করেন। অনেক সময় নির্জলা উপবাসও রাখা হয়।

🔹 তন্ত্র ও যন্ত্রপূজা:
কিছু নির্দিষ্ট মন্দিরে ভগরথা দেবীর পূজায় তান্ত্রিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। সেখানে মহামায়ার বিশেষ যন্ত্র স্থাপন করে পূজা করা হয়, যা সাধকদের আধ্যাত্মিক উন্নতির পথ খুলে দেয়।

🔹 পুষ্পাঞ্জলি ও নারিকেল নিবেদন:
ভক্তরা “পুষ্পাঞ্জলি” নিবেদন করে দেবীর চরণে ফুল ছুঁড়ে আশীর্বাদ কামনা করেন। নারিকেল ফাটানো কেরালার ভক্তদের একটি বিশেষ রীতি, যা বিপদ বিনাশের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

এইসব রীতি ও প্রথার মধ্য দিয়ে দেবী ভগরথা কেরালাবাসীর জীবনে এক গভীর আধ্যাত্মিক অনুরণন সৃষ্টি করেন। ব্যক্তিগত জীবন হোক বা পারিবারিক, তাঁর পূজা সবক্ষেত্রে শুভফলদায়ক বলেই বিশ্বাস করা হয়।

মালয়ালি হিন্দুদের বিশ্বাস

ভগরথা দেবী কেরালার মালয়ালি হিন্দু সমাজে শুধুমাত্র একটি দেবীমূর্তি নন—তিনি আশ্রয়, শক্তি ও ভক্তির এক জীবন্ত প্রতীক। ভক্তদের বিশ্বাস, দেবী ভগবতী যেকোনো দুঃখ-দুর্দশা, রোগ-ব্যাধি, ও জীবনের সংকট থেকে রক্ষা করেন এবং শান্তি ও কল্যাণ আনয়ন করেন।

রোগমুক্তির দেবী:
অনেক ভক্ত মনে করেন, নিয়মিত ভগরথা দেবীর পূজা ও ব্রত পালনে শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা দূর হয়। মন্দিরে এসে নারিকেল ভাঙা, প্রদীপ জ্বালানো বা পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করার মাধ্যমে তাঁরা রোগমুক্তির প্রার্থনা করেন।

 বিপদ থেকে রক্ষা:
ভগরথা দেবীকে ‘রক্ষা কর্তা’ হিসেবে মানা হয়। জীবনের প্রতিটি ঝুঁকিপূর্ণ সময়—যেমন দুর্ঘটনা, আদালতের মামলা, পরিবারে অশান্তি বা কর্মস্থলের সংকট—এই সব থেকে রক্ষার জন্য ভক্তরা দেবীর শরণাপন্ন হন।

 সন্তানসুখ ও গৃহস্থের শান্তি:
অনেক নারী ভগরথা দেবীর কাছে দীর্ঘদিন সন্তান কামনায় উপবাস ও পূজা করেন। ভক্তদের বিশ্বাস, দেবীর কৃপায় নিঃসন্তান দম্পতির ঘর আলো করে ওঠে সন্তান আগমনে। একইসঙ্গে, ঘর-সংসারে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি বজায় রাখতে দেবীর পূজা অত্যন্ত ফলদায়ক।

 ইচ্ছাপূরণে বিশ্বাস:
কেরালার বহু পরিবারে প্রচলিত একটি বিশ্বাস হল — “দেবী যা শোনেন, তা পূরণ করেন।” এজন্য অনেক ভক্ত গোপনে তাঁদের মনের কথা জানিয়ে ব্রত পালন করেন এবং ইচ্ছাপূরণ হলে মানত রক্ষা করেন।

এই বিশ্বাসগুলিই প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ভগরথা দেবীর প্রতি মানুষের ভক্তি আরও গভীর ও দৃঢ় করে তুলেছে। দেবী এখানে শুধু উপাস্য নন, বরং প্রতিটি মালয়ালি হিন্দুর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

আরও পড়ুন: ঊনকোটি পর্বত কোটি দেবতার ভূমি – জানুন এর ঐতিহ্য ও কাহিনী

উপসাগরীয় দেশগুলোতে ভগরথা দেবীর পূজা

কেরালা প্রবাসী হিন্দুদের মধ্যে ভগরথা দেবীর প্রতি ভক্তি শুধুমাত্র ভারতের সীমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় — তা আজ ছড়িয়ে পড়েছে উপসাগরীয় দেশগুলোর নানা প্রান্তে। দুবাই, কুয়েত, ওমান, বাহরাইন ও কাতার-এর মতো দেশগুলোতে বসবাসকারী মালয়ালি হিন্দু সম্প্রদায় প্রতি বছর নিয়মিতভাবে ভগরথা দেবীর পূজা ও উৎসব পালন করে থাকেন।

প্রবাসী সমাজের ঐক্য ও আত্মিক বন্ধন:
বিদেশের ব্যস্ত জীবনে ভগরথা দেবীর পূজা প্রবাসী মালয়ালিদের জন্য একটি আত্মিক মিলনক্ষেত্র হয়ে দাঁড়ায়। এসব অনুষ্ঠানে তাঁরা একত্রিত হয়ে প্রার্থনা, উপবাস, আরতি, এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে মাতৃরূপ দেবীর পূজা করেন।

সাময়িক মন্দির ও মিলনস্থল:
যেখানে স্থায়ী মন্দির নেই, সেখানেও ভক্তরা ঘরবাড়ি, কমিউনিটি হল, বা প্রবাসী সংগঠনের সহায়তায় সাময়িকভাবে মন্দিরের পরিবেশ তৈরি করে দেবীর পূজা করেন। অনেক স্থানে অনলাইন মাধ্যমে ভগরথা দেবীর লাইভ পূজা সম্প্রচারও করা হয়।

ত্রিশূর-পূরামের অনুকরণে উৎসব:
বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী মালয়ালি সংগঠনগুলো ত্রিশূর-পূরামের আদলে ছোট আকারে রঙিন পূজা উৎসব আয়োজন করে, যেখানে হয় চেন্ডা মেলাম, ভক্তিগীত, নৃত্য ও প্রার্থনা। এতে নতুন প্রজন্মও কেরালার ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারে।

 ভক্তির সঙ্গে সংস্কৃতি সংরক্ষণ:
এই পূজাগুলোর মাধ্যমে প্রবাসীরা শুধুমাত্র ধর্মীয় চর্চাই করেন না, বরং নিজেদের সংস্কৃতি, ভাষা ও কেরালার শিকড়ের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক বজায় রাখেন। দেবী পূজা হয়ে ওঠে এক আত্মপরিচয়ের উৎসব।

উপসাগরীয় অঞ্চলে এইভাবে ভগরথা দেবী কেবল একটি ধর্মীয় উপাসনার বিষয় নন, বরং প্রবাসী মালয়ালি হিন্দু সমাজের ঐক্য, বিশ্বাস ও সংস্কৃতির প্রতীক হয়ে উঠেছেন।

ভগরথা দেবীর প্রতীক ও চিহ্ন

ভগরথা দেবীর প্রতিটি রূপ ও প্রতীক তাঁর অন্তর্নিহিত শক্তি, আধ্যাত্মিকতা এবং মাতৃত্বের বহিঃপ্রকাশ। কেরালার বিভিন্ন মন্দিরে দেবীর মূর্তিগুলি কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য বহন করে, যা তাঁকে অন্যান্য দেবী রূপ থেকে আলাদা করে তোলে এবং শক্তির প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

 ত্রিশূল (ত্রিশুল):
দেবীর অন্যতম প্রধান প্রতীক হল ত্রিশূল — যা তাঁর শক্তির প্রতীক, এবং একই সঙ্গে সৃষ্টি, সংরক্ষণ ও ধ্বংসের তিনটি শক্তিকে নির্দেশ করে। ত্রিশূল অসুর বিনাশের প্রতীক হিসেবেও গণ্য হয়।

 আগুনের জিহ্বা (Flaming Tongue):
বিভিন্ন মূর্তিতে ভগরথা দেবীর জিহ্বা আগুনময়ভাবে প্রদর্শিত হয় — যা তাঁর রুদ্ররূপ ও অসুরনাশী শক্তির বহিঃপ্রকাশ। এটি রাগ, শক্তি ও মহাশক্তির রূপকে চিহ্নিত করে।

 লাল শাড়ি ও অলংকার:
দেবী সাধারণত গাঢ় লাল রঙের শাড়ি পরিহিতা অবস্থায় উপস্থাপিত হন, যা রক্ত, আগুন, শক্তি ও জীবনীশক্তির প্রতীক। তাঁর গায়ে সোনার গয়না, কপালে চন্দন বা কুমকুমের তিলক, ও হাতে অস্ত্রশস্ত্র থাকে।

বিভিন্ন অস্ত্র ও মুদ্রা:
ত্রিশূল ছাড়াও দেবীর হাতে দেখা যায় খড়্গ (তলোয়ার), ঢাল, দণ্ড, পাত্র ইত্যাদি। এইসব প্রতীক দেবীর শক্তি, জ্ঞান, ও রক্ষাকর্তার ভূমিকা নির্দেশ করে। অনেক ক্ষেত্রে দেবী অভয়মুদ্রায় (ভয়হীনতার আশ্বাস) দেখা যায়।

 সিংহ বা গজবাহনা:
কিছু মূর্তিতে দেবীকে সিংহ বা হাতির পিঠে আরোহিতা হিসেবে দেখানো হয় — যা সাহস, নেতৃত্ব ও বিজয়ের প্রতীক।

এই প্রতীক ও চিহ্নগুলো শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক অর্থ বহন করে না, বরং ভক্তদের মনে সাহস, আশ্রয় ও আত্মবিশ্বাস জাগায়। এগুলোই ভগরথা দেবীকে কেরালার শক্তিসাধনার এক অমূল্য কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসে।

 সাংস্কৃতিক প্রভাব

ভগরথা দেবীর প্রভাব কেবল ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানেই সীমাবদ্ধ নয় — তিনি কেরালার লোকসংস্কৃতি, সংগীত, নৃত্য ও সাহিত্যের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছেন। দেবীর গৌরবগাথা ও কীর্তি কেরালার সংস্কৃতির প্রতিটি স্তরে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়।

 থিয়াট্টম (Theeyattu):
ভগরথা দেবীর প্রতি নিবেদিত এক বিশেষ লোকনৃত্য হল “থিয়াট্টম”। এটি একটি প্রাচীন মন্দির-ভিত্তিক নাট্যশৈলী যেখানে মুখোশ পরে, ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত শিল্পীরা দেবীর গুণগান করেন। এই নৃত্যে দেবীর যুদ্ধরূপ, অসুরবিনাশ ও মাতৃত্বকে আলেখ্যরূপে উপস্থাপন করা হয়।

 লোকগান ও ভক্তিগীত:
কেরালার গ্রামাঞ্চলে এখনো প্রচলিত বহু প্রাচীন ভক্তিগীতি, পালা ও পদাবলীতে ভগরথা দেবীর নাম উচ্চারিত হয়। উৎসব ও পূজার সময় এই গানগুলি পরিবেশকে এক আধ্যাত্মিক আবহে ভরিয়ে তোলে।

 লোককথা ও কিংবদন্তি:
ভগরথা দেবীর জন্ম, অসুর দমন, কিংবা নির্দিষ্ট কোনও অঞ্চলের রক্ষা করা সংক্রান্ত বহু লোককথা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়েছে। এইসব কাহিনি অনেক সময় শিশুদের গল্প, নাটক বা কাব্যে স্থান পায়।

চিত্রকলা ও কেরালার মূর্তি শিল্প:
কেরালার ঐতিহ্যবাহী “কাঠাকলি” বা “মুরাল পেইন্টিং”-এ দেবীর রূপ ও শক্তি বহুবার চিত্রিত হয়েছে। মন্দিরের প্রাচীন দেয়ালে পাওয়া যায় দেবীর যুদ্ধরূপের চিত্র, যা শিল্প ও ধর্মের মিলন ঘটায়।

 উৎসবের মাধ্যমে সমাজজীবনে প্রভাব:
ত্রিশূর-পূরাম সহ নানা উৎসবের মাধ্যমে দেবী কেরালার মানুষের জীবনে মিলন, ভ্রাতৃত্ব ও সামাজিক ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দেন।

ভগরথা দেবী শুধুমাত্র পূজার মূর্তি নন — তিনি কেরালার সংস্কৃতির হৃদয়। তাঁর গুণগান ও চেতনা কেরালার শিল্প, সংস্কৃতি ও জীবনের প্রতিটি পরতে আজও সমানভাবে বয়ে চলেছে।

ভগরথা দেবী ও নারী শক্তির প্রতীক

ভগরথা দেবী কেবলমাত্র একটি পূজার যোগ্য দেবীমূর্তি নন, তিনি নারীত্ব, শক্তি ও স্বাধীনতার এক জীবন্ত প্রতীক। কেরালার বহু নারী তাঁকে আত্মবিশ্বাস, সাহস ও জীবনের অনুপ্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করেন। দেবীর শক্তিময় রূপ, অসুরবিনাশী ভঙ্গি এবং অভয়দানময়ী রূপ নারীদের কাছে আত্মরক্ষার ও আত্মমর্যাদার প্রতীক।

 নারীর আত্মপরিচয়ের প্রতীক:
ভগরথা দেবী নারীর স্বরূপকেই মহিমাময় করে তোলেন। তিনি শুধু স্ত্রীলিঙ্গের ভক্তদের নয়, সমগ্র সমাজকে নারী শক্তির মূল্য ও গুরুত্ব বোঝান। তাঁর রূপে একাধারে মাতৃত্ব, সাহস, কঠোরতা ও মমতা প্রকাশ পায়।

 স্বনির্ভরতার বার্তা:
কেরালার নারীরা বিশেষ করে তাঁকে দেখেন জীবনের কঠিন পরিস্থিতিতে শক্তির উৎস হিসেবে। কর্মজীবী নারী, গৃহবধূ, শিক্ষার্থী—সবার মধ্যেই দেবীর উপস্থিতি এক ধরণের সাহস ও আত্মনির্ভরতার জাগরণ ঘটায়।

 সমাজ ও পারিবারিক জীবনে ভূমিকা:
অনেক নারী ঘরে ভগরথা দেবীর ছবি রেখে প্রতিদিন পূজা করেন এবং বিশ্বাস করেন—দেবীর আশীর্বাদে সংসার সুশৃঙ্খল, সন্তান সুশিক্ষিত ও স্বামী সুস্থ থাকেন। পাশাপাশি, জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তাঁকে জীবনের দিশারূপে মানেন।

 উৎসব ও ব্রতের কেন্দ্রবিন্দু:
নারীদের জন্য ভগরথা দেবীর পূজা শুধুই আচার নয় — এটি তাঁদের আত্মিক চর্চা ও ব্যক্তিগত শক্তির উত্স। বিশেষ করে শুক্রবারের ব্রত, উপবাস ও নারীকেন্দ্রিক পূজার রীতিতে নারীরা তাঁদের জীবনের শক্তির আধার খুঁজে পান।

ভগরথা দেবী তাই আজও কেরালার নারী সমাজের কাছে এক আধ্যাত্মিক আশ্রয়, অভিভাবক এবং জীবনের পথপ্রদর্শক রূপে পূজিত হয়ে আসছেন।

 ভক্তদের অভিজ্ঞতা ও ব্রত

ভগরথা দেবীর ভক্তরা বিশ্বাস করেন—দেবী কেবলমাত্র পূজিত নয়, তিনি সরাসরি জীবনকে স্পর্শ করেন। ভক্তদের জীবনযাত্রায় তাঁর আশীর্বাদ ও উপস্থিতির প্রভাব এতটাই বাস্তব যে বহু মানুষ নিজেদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও অলৌকিক ঘটনা দেবীর কৃপা বলে মানেন।

 শুক্রবারের ব্রত (Bhagavati Vrat):
প্রতি শুক্রবার বহু নারী ও পুরুষ “ভগবতী ব্রত” পালন করেন। এই ব্রতে উপবাস, নিরামিষ আহার, ও বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। দেবীর উদ্দেশ্যে প্রদীপ জ্বালানো, ফুল ও লাল বস্ত্র নিবেদন করা হয়।
বিশেষ করে নারীরা সন্তানসুখ, দাম্পত্য সুখ, স্বাস্থ্য ও মানসিক শান্তির জন্য এই ব্রত পালন করেন।

 ইচ্ছাপূরণের বিশ্বাস:
বহু ভক্ত বিশ্বাস করেন—দেবী সত্যিই ইচ্ছাপূরণ করেন। কেউ কেউ সন্তান লাভ করেছেন, কেউ কঠিন অসুস্থতা থেকে সুস্থ হয়েছেন, আবার কেউ জীবনের কঠিন সিদ্ধান্তে সঠিক পথ খুঁজে পেয়েছেন। এইসব ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সামাজিক মাধ্যম বা মন্দির সংলগ্ন আখ্যানের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

সংসার ও কর্মজীবনে সাহায্যকারী শক্তি:
কেরালার গৃহস্থালি বা কর্মজীবী নারীরা দেবীর ব্রত পালন করে সংসারে সমৃদ্ধি, স্বামীর সুরক্ষা ও সন্তানদের মঙ্গল কামনা করেন। আবার ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষার আগে দেবীর কাছে প্রার্থনা করেন সাফল্যের আশায়।

ভক্তির অভিজ্ঞতায় আত্মিক উন্নতি:
অনেকেই বলেন—দেবীর উপাসনার মাধ্যমে তাঁদের মানসিক শান্তি ও আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। এটি শুধু পূজার আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এক ধরণের আত্মিক জাগরণ।

ভগরথা দেবীর ব্রত তাই শুধুই এক ধর্মীয় রীতি নয়—এটি ভক্ত ও দেবীর এক নিবিড়, আত্মিক সম্পর্কের বহিঃপ্রকাশ।

 দেবী পূজার সময়সূচী ও উৎসব ক্যালেন্ডার

ভগরথা দেবীর পূজা ও উৎসব কেরালার ধর্মীয় বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বিভিন্ন সময়ে পালন করা হয়। এর মধ্যে কিছু সময় বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র বলে বিবেচিত।

মীনা মাস (Meena Masam):
কেরালার মালায়ালম পঞ্জিকা অনুযায়ী, মার্চ-এপ্রিল সময়কাল মীনা মাস হিসেবে পরিচিত। এই সময়ে ভগরথা দেবীর উদ্দেশ্যে বিশেষ পূজা, উপবাস এবং নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করা হয়।
এই মাসে দেবীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং পারিবারিক মঙ্গল কামনায় ভক্তরা মন্দিরে ভিড় করেন।

 ত্রিশূর-পূরাম (Thrissur Pooram):
এটি কেরালার অন্যতম বৃহৎ ও বর্ণাঢ্য উৎসব, যা সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে অনুষ্ঠিত হয়। ত্রিশূরের ভদ্রকালী মন্দির-সহ অন্যান্য দেবালয়ে এই সময় বিশাল আকারে ভগরথা দেবীর পূজা হয়।
এই উৎসবে ঘোড়া-মার্চ, পঞ্চবাদ্য, শোভাযাত্রা, হাতির মিছিল, আলোকসজ্জা ও আতশবাজির মাধ্যমে দেবীর গৌরব উদযাপন করা হয়। এটি শুধু ধর্মীয় নয়, এক সাংস্কৃতিক মহোৎসব হিসেবেও খ্যাত।

 অন্যান্য ব্রত ও বিশেষ দিন:

  • প্রতি শুক্রবার: ভগবতী ব্রত পালন করা হয়।
  • নবরাত্রি ও অষ্টমী তিথিতেও বিশেষ পূজার ব্যবস্থা থাকে।
  • মন্দিরভেদে বার্ষিক উত্সব বা “উৎসবম” পালন করা হয়, যা স্থানীয় উপাসক সমাজের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

ভক্তরা এই সময়গুলোতে উপবাস, দান-ধ্যান ও সপরিবার মন্দির দর্শনের মাধ্যমে তাঁদের ভক্তি প্রকাশ করে থাকেন।

পর্যটকদের জন্য আকর্ষণ

ভগরথা দেবী শুধুমাত্র একটি আধ্যাত্মিক শক্তির প্রতীক নন, তিনি কেরালার সাংস্কৃতিক ও পর্যটন মানচিত্রেও এক গুরুত্বপূর্ণ নাম। বিশেষ করে ত্রিশূর-পূরাম উৎসবের সময় কেরালা পরিণত হয় এক রঙিন, সজীব, এবং আধ্যাত্মিক প্রাণকেন্দ্রে।

 ত্রিশূর-পূরাম: পর্যটকদের প্রিয় গন্তব্য
এপ্রিল-মে মাসে অনুষ্ঠিত ত্রিশূর-পূরাম কেবল ভক্তদের জন্য নয়, দুনিয়াজুড়ে ভ্রমণপিপাসু ও আলোকচিত্রপ্রেমীদের জন্যও এক দুর্লভ অভিজ্ঞতা। এই উৎসবে শোভাযাত্রার অংশ হয়ে ওঠে আলোকসজ্জিত হাতি, পঞ্চবাদ্য, ছাতা বদলের অনন্য রীতি ও আতশবাজি — যা পর্যটকদের মুগ্ধ করে।

 সংস্কৃতি, নৃত্য ও শিল্পের অনন্য মেলবন্ধন
উৎসবকালে কেরালার লোকনৃত্য (যেমন থিয়াট্টম), শাস্ত্রীয় সংগীত, ও স্থানীয় হস্তশিল্পের স্টলগুলি বিদেশি ও দেশি পর্যটকদের মন জয় করে নেয়। এটি কেবল ধর্মীয় নয়, এক সাংস্কৃতিক ভ্রমণও বটে।

 আধ্যাত্মিক ভ্রমণের অনুভূতি
অনেক পর্যটক শুধু উৎসব উপভোগ করতে নয়, বরং ভগরথা দেবীর মন্দিরে গিয়ে ধ্যান ও প্রার্থনার মাধ্যমে আত্মিক প্রশান্তি লাভ করতেও কেরালা আসেন। ফলে এটি হয়ে ওঠে এক ধরনের “spiritual tourism”।

 আবাসন ও ভ্রমণ সুবিধা
ত্রিশূর ও আশেপাশের এলাকায় এই সময় বহু হোটেল, গেস্ট হাউস, এবং ট্রাভেল সার্ভিস পর্যটকদের জন্য বিশেষ প্যাকেজ অফার করে। বিদেশি পর্যটকদের জন্য গাইড ও অনুবাদকরাও প্রস্তুত থাকেন।

সুতরাং, ভগরথা দেবীর উৎসব শুধুই ধর্মীয় ঘটনা নয়, এটি কেরালার ঐতিহ্য ও আতিথেয়তার এক জীবন্ত উদাহরণ, যা প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটককে আকৃষ্ট করে।

 ঐতিহ্য, ভক্তি ও শক্তির সমন্বয়

ভগরথা দেবী শুধু একটি ধর্মীয় রূপ নয়, তিনি কেরালার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও নারীশক্তির এক অনন্য প্রতীক। তার প্রতি ভক্তি ও আস্থা কেবল আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং কেরালার সমাজ ও সংস্কৃতির প্রতিটি স্তরে গভীরভাবে প্রবাহিত।

ভগরথা দেবীর পূজা ও উৎসব যেমন ধর্মীয় জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তেমনি তারা নারীশক্তির মহিমা ও স্বাধীনতার বার্তা বহন করে। দেবীর রূপে আত্মবিশ্বাস, সাহস এবং মাতৃত্বের মেলবন্ধন স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যা কেরালার নারীদের জীবনে অনুপ্রেরণার উৎস।

ত্রিশূর-পূরামের মতো উৎসবগুলো কেবল একটি ধর্মীয় আয়োজন নয়, বরং তারা কেরালার ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক ঐক্যের প্রতিফলন। স্থানীয় ও প্রবাসী মালয়ালি হিন্দু সমাজ এই দেবীর আশীর্বাদে একত্রিত হয়, তাদের বিশ্বাস ও সংস্কৃতি জীবিত রাখে।

ভগরথা দেবী কেবল একটি দেবী নয়; তিনি কেরালার মানুষের হৃদয়ে জীবন্ত একটি শক্তি, যা তাঁদের জীবন, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত।

আরও পড়ুন: বাটু কেভ মন্দির (মালয়েশিয়া) ইতিহাস, গুহার সৌন্দর্য, মূর্তি ও ভ্রমণ গাইড

পোস্ট টি ভালোলাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না 🙏