শতাব্দীপ্রাচীন বুড়া কালীমাতা মন্দির নওগাঁর ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গর্ব

পোস্ট টি ভালোলাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না

শতাব্দীপ্রাচীন বুড়া কালীমাতা মন্দির

ভক্তি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক অপূর্ব মিলনস্থল

নওগাঁ সদর উপজেলার হৃদয়ে অবস্থিত কালীতলার শ্রীশ্রী বুড়া কালীমাতা মন্দির শুধুমাত্র একটি পূজার স্থান নয়, এটি স্থানীয় মানুষের আত্মিক বিশ্বাস, সংস্কৃতি ও শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্যের ধারক। মন্দিরটি বছরের পর বছর ধরে অসংখ্য ভক্তের আস্থা ও ভালোবাসার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, এই স্থানে মা কালী স্বয়ং বিরাজমান — যাঁর কৃপায় রোগ, দুঃখ ও বিপদ দূর হয়।

মন্দিরের অবস্থানটি যেমন সহজে পৌঁছানো যায়, তেমনই এর আধ্যাত্মিক আবহ হৃদয়ে এক শান্তির অনুভব এনে দেয়। প্রতিদিনই বহু মানুষ এখানে এসে প্রার্থনা করেন, আর বিশেষ উৎসবের দিনে ভক্তের ঢল নামে কালীতলায়। কালী পূজা, মহাষ্টমী বা কুমারী পূজার মতো অনুষ্ঠানে এই মন্দির পরিণত হয় এক মহোৎসবের মেলায়। এখানকার আধ্যাত্মিক পরিবেশ, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে থাকা এই মন্দির আজ নওগাঁবাসীর গর্ব ও পরিচয়ের প্রতীক।

ভৌগোলিক ও প্রশাসনিক অবস্থান

নওগাঁ জেলার প্রাণকেন্দ্র নওগাঁ সদর উপজেলার অন্তর্গত এক ঐতিহাসিক অঞ্চল কালীতলা — যেখানে অবস্থিত শ্রীশ্রী বুড়া কালীমাতা মন্দির। শহরের মূল জনবসতি থেকে খুব একটা দূরে নয়, তাই মন্দিরটি স্থানীয় মানুষ ছাড়াও আশেপাশের উপজেলা ও জেলা থেকে আগত ভক্তদের জন্যও সহজে যাতায়াতযোগ্য। মন্দির চত্বরটি একটি শান্তিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় অবস্থিত, যা আধ্যাত্মিক পরিবেশকে আরও গভীর করে তোলে।

 যোগাযোগ ব্যবস্থা:

নওগাঁর প্রধান বাসস্ট্যান্ড বা শহরকেন্দ্র থেকে কালীতলা পর্যন্ত পৌঁছানো যায় রিক্সা, অটোরিকশা বা ব্যক্তিগত যানবাহনের মাধ্যমে।
রাস্তা পাকা ও যথেষ্ট সুবিধাজনক — ফলে বয়স্ক কিংবা দূরদূরান্ত থেকে আগত ভক্তরাও স্বাচ্ছন্দ্যে মন্দির দর্শন করতে পারেন।
নিত্যদিনই মন্দিরের আশপাশে ছোটখাটো দোকান, পানির ব্যবস্থা ও বসার জায়গা রয়েছে, যা দর্শনার্থীদের জন্য বাড়তি সুবিধা।

নওগাঁ শহরের কেন্দ্রীয় অংশ থেকে মন্দিরে পৌঁছাতে মাত্র ১০–১৫ মিনিট সময় লাগে, যা পর্যটকদের জন্যও এটি এক উপযুক্ত গন্তব্য করে তুলেছে।

মন্দিরের ইতিহাস ও প্রতিষ্ঠা

নওগাঁর কালীতলার শ্রীশ্রী বুড়া কালীমাতা মন্দির স্থানীয় ইতিহাস, লোকবিশ্বাস এবং ধর্মীয় সংস্কৃতির এক অনন্য নিদর্শন। এই মন্দিরের সঠিক প্রতিষ্ঠা সালের কোনো লিখিত নথি পাওয়া না গেলেও, স্থানীয় প্রবীণদের ভাষ্য অনুযায়ী এটি অন্তত ১৫০–২০০ বছরের পুরোনো। বহু প্রজন্ম ধরে এই এলাকায় কালীপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে, যার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে এই মন্দির।

 স্থানীয় ভিত্তি ও উৎস

প্রথমে এটি ছিল একটি ছোট্ট কালি প্রতিমার স্থান, যেখানে এক ধার্মিক গৃহস্থ পরিবার নিয়মিত পূজা করতেন। ধীরে ধীরে স্থানীয় মানুষের ভক্তি, দান ও পরিশ্রমে এটি পূর্ণাঙ্গ মন্দিরে রূপ নেয়। কালীতলা এলাকাটি নামেও পরিচিত হয়ে ওঠে এই মন্দিরকে ঘিরেই।

 কিংবদন্তি কাহিনি ও লোককথা

স্থানীয়দের মতে, বহু বছর আগে কালীতলার আশেপাশের অঞ্চল ছিল ঘন জঙ্গলাকীর্ণ। সেই সময় এক কৃষক স্বপ্নে মা কালীকে দর্শন পান, যেখানে দেবী তাঁকে জানান এক নির্দিষ্ট স্থানে পূজা শুরু করতে। কৃষক সেই স্থান খুঁড়ে কালীমূর্তি খুঁজে পান বলে বিশ্বাস করা হয়। পরবর্তীতে, সেই স্থানেই নির্মিত হয় আজকের এই কালীমাতা মন্দির।

একটি প্রচলিত কাহিনী অনুসারে, একবার এক মারাত্মক রোগে এলাকাবাসী আক্রান্ত হলে ভক্তরা একত্রে মা কালীকে ত্রাণপ্রার্থনা করে একটি বিশেষ যজ্ঞ আয়োজন করেন। আশ্চর্যজনকভাবে, এরপর রোগ কমে যায় — আর তখন থেকেই এই মন্দিরকে “বুড়া কালীমাতা” নামে অভিহিত করা শুরু হয়। ‘বুড়া’ শব্দটি স্থানীয় ভাষায় ‘পুরাতন’ বা ‘মহাশক্তির অধিষ্ঠাত্রী’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

এই মন্দিরের ইতিহাস কেবল ধর্মীয় নয়, এটি নওগাঁবাসীর বিশ্বাস, স্মৃতি ও সংস্কৃতিরও একটি জীবন্ত প্রতিফলন

দেবী ও প্রতিমা

ব্রহ্মাণ্ডের শক্তির রূপ – কালীমাতা

শ্রীশ্রী বুড়া কালীমাতা মন্দিরের কেন্দ্রবিন্দুতে অধিষ্ঠান করছেন দেবী কালী — হিন্দু ধর্মে যাঁকে ধরা হয় ব্রহ্মাণ্ডের তামসিক শক্তির প্রতীক, কলির অন্ধকার দূরীকরণে এক অমোঘ দেবী। তিনি ধ্বংস ও সৃজনের মধ্যস্থ শক্তি, যিনি অশুভ শক্তিকে বিনাশ করে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর রূপ ভয়ংকর হলেও ভক্তদের কাছে তিনি এক করুণাময়ী মাতৃরূপে পূজিতা।

প্রতিমার রূপ ও আলঙ্কারিক বৈশিষ্ট্য

কালীতলার কালীমাতার প্রতিমাটি তৈরি করা হয়েছে কষ্টিপাথরের মতো দেখতে এক প্রাচীন কাঠামোয়।
প্রতিমার মুখমণ্ডল কালো, বড় বড় চোখ, জিহ্বা বাহিরে—যা ভয়ংকর রূপের নিদর্শন হলেও ভক্তদের কাছে আশীর্বাদের প্রতীক।
দেবীর গলায় মুন্ডমালা, হাতে খড়গ ও কাটা মুণ্ডু, কোমরে ছিন্নমস্তক বেষ্টনী এবং তিনি শিবের ওপর দাঁড়ানো অবস্থায় বিরাজমান — যা তাঁর শক্তি, ক্ষমা এবং বিনাশী রূপের প্রতিনিধিত্ব করে।

প্রতিমাটি প্রতি বছর ধূপ-দীপ-নাড়া ও শঙ্খধ্বনির মধ্য দিয়ে অভিষিক্ত হয়। উৎসবের সময়ে প্রতিমার সাজে যুক্ত হয় রঙিন শাড়ি, সোনালি গয়না, ও ফুলমালা, যা স্থানীয় নারীদের হাতে তৈরি।

 পূজা-পদ্ধতি

প্রতিদিন মন্দিরে নিয়মিত সন্ধ্যারত্ন আরতি, প্রদীপ জ্বালানো ও ফল-মিষ্টি নিবেদন করা হয়।
বিশেষ করে অমাবস্যা, কালীরাত্রি ও মহাষ্টমীর দিন মহাযজ্ঞ, চণ্ডীপাঠ ও কুমারী পূজার মাধ্যমে মহামারীর বিনাশ ও পরিবারে শান্তি কামনা করা হয়।

স্থানীয় পূজারি ও ভক্তরা বিশ্বাস করেন — কালীমাতার দর্শন ও পূজায় জীবনের বিপদ কেটে যায়, শত্রু দূর হয় এবং পরিবারে কল্যাণ আসে।

 আর্কিটেকচার ও রক্ষণাবেক্ষণ

ঐতিহ্যবাহী নির্মাণে শক্তি ও সরলতার মিশেল

নওগাঁর কালীতলার শ্রীশ্রী বুড়া কালীমাতা মন্দিরের স্থাপত্যে মিশে আছে গ্রামীণ বাংলার ঐতিহ্য ও আধ্যাত্মিক সৌন্দর্য। মন্দিরটি গঠিত হয়েছে সিমেন্ট ও ইটের গাঁথুনিতে, যার ওপর চুন-সুরকি ও রঙের প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। এর নকশা আধুনিক কৌশলের চেয়ে অনেক বেশি সাধারণ কিন্তু বলিষ্ঠ, যা জায়গাটিকে দেবীমায়ার উপাসনার উপযোগী করে তোলে।

 স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য:

  • মন্দিরে রয়েছে একটি উঁচু মন্ডপ, যার নিচে দেবীর আসন স্থাপিত।
  • ছাদটি একচূড়াযুক্ত ও গোলাকার ঢালু — যা বাংলার ঐতিহ্যবাহী মন্দিরশৈলীর ছাপ বহন করে।
  • মন্দিরের সামনের অংশে প্রবেশপথে দুটি সিংহমূর্তি এবং দেয়ালে হালকা অলংকরণ লক্ষ্য করা যায়।
  • ভেতরের অংশটি খোলামেলা ও হাওয়াপ্রবাহপূর্ণ, যাতে পূজার সময় ধূপ ও প্রদীপের ধোঁয়া সহজে বেরিয়ে যেতে পারে।

 রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার

স্থানীয় পূজারি পরিবার ও ভক্তবৃন্দের সহযোগিতায় মন্দিরটি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা করা হয়।
বিশেষ উৎসব বা পূজার আগে রঙের প্রলেপ, আলোকসজ্জা, কাপড়ের সজ্জা নতুন করে দেওয়া হয়।
কোনও বড় সংস্কার প্রয়োজন হলে, স্থানীয় সমাজসেবী ও ভক্তদের চাঁদা অথবা অনুদানের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করা হয়।

যদিও এটি কোনো আধুনিক স্থাপত্যের নিদর্শন নয়, তবুও এই মন্দিরের আদি সৌন্দর্য ও গাম্ভীর্য একে অতুলনীয় মহিমা প্রদান করেছে।

প্রধান উৎসব ও বার্ষিক পূজা

কালীপূজা থেকে সামাজিক মিলন—ভক্তির প্রাণপ্রবাহ

নওগাঁর কালীতলার শ্রীশ্রী বুড়া কালীমাতা মন্দির শুধু দৈনন্দিন পূজার কেন্দ্র নয়, বরং বছরজুড়ে নানা ধর্মীয় উৎসব ও সামাজিক অনুষ্ঠানের প্রাণকেন্দ্র। এখানকার প্রতিটি উৎসব শুধু ধর্মীয় আচারেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং তা হয়ে ওঠে সামাজিক মিলনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

 কালীপূজা ও মহাষ্টমী

এই মন্দিরে সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালিত হয় কালীপূজা। কার্তিক মাসের অমাবস্যার রাতে আয়োজিত এই পূজায় ভক্তরা বহুদিন আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়।
দেবীকে নিবেদন করা হয় বিভিন্ন ফল, মিষ্টান্ন ও মাংসসহ নানান ভোগ।
বিশেষ করে মহাষ্টমীর দিন চণ্ডীপাঠ, প্রদীপ প্রজ্বালন, আরতি ও কুমারী পূজা হয় ব্যাপক আয়োজনে।

 দুর্গাপূজা

দশমীর বিসর্জন শেষে বহু ভক্ত কালীমাতার দর্শনে এই মন্দিরে আসেন।
দুর্গাপূজার সময়কালেও মন্দিরে আলোকসজ্জা ও বিশেষ পূজা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে স্থানীয় স্কুল, ক্লাব ও সামাজিক সংগঠন অংশ নেয়।

 বার্ষিক মেলা ও সামাজিক অনুষ্ঠান

কালীপূজার সময় মন্দিরের আশেপাশে আয়োজন করা হয় এক বার্ষিক ধর্মীয় মেলা, যেখানে বসে হস্তশিল্প, খাবার, পাঁঠা-ভোগ ও প্যারা সন্দেশের দোকান।
এই মেলাটি শুধু পূজা নয়, একপ্রকার সামাজিক মিলনমেলা — যেখানে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও মানুষ ভিড় করেন।

প্রতি বছর এই পূজা ও মেলার মাধ্যমে মানুষ তাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে মিলিত হন, স্মৃতি রোমন্থন করেন এবং মাতৃভক্তিতে নিজেদের নতুন করে উজাড় করে দেন।

 সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব

ভক্তি, ঐতিহ্য আর মিষ্টির সুগন্ধে ঘেরা কালীতলা

নওগাঁর কালীতলার শ্রীশ্রী বুড়া কালীমাতা মন্দির শুধুই একটি ধর্মীয় উপাসনাস্থল নয়, বরং এটি স্থানীয় সংস্কৃতি, মানুষের জীবনধারা ও সামাজিক বন্ধনের এক কেন্দ্রবিন্দু। প্রতিদিনই বহু মানুষ এখানে আসেন শুধু প্রার্থনার জন্য নয়, আত্মিক শান্তি ও সামাজিক যোগাযোগের আশায়ও।

 স্থানীয় মানুষের ভক্তি ও আচার-অনুষ্ঠান

মন্দিরটি এলাকার মানুষের ধর্মীয় জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

  • এখানে জন্মদিন, সংকটমোচন, নবান্ন, শ্রাদ্ধ কিংবা নতুন বাসস্থান গৃহপ্রবেশের আগে কালীমাতার আশীর্বাদ নেওয়ার রীতি রয়েছে।
  • প্রতিবছর পূজার সময় এলাকার নারী-পুরুষেরা নিজ হাতে ভোগ রাঁধেন, ঘরোয়া পরিবেশেই চলে চণ্ডীপাঠ ও হোমযজ্ঞ।
  • অনেক পরিবার পিতৃপুরুষের স্মরণে মন্দিরে দান, প্রসাদ বিতরণ বা অনুস্থানের আয়োজন করেন — যা একটি সামাজিক রীতিতে রূপ নিয়েছে।

 ‘প্যারা সন্দেশ’ – ভোগের স্বাদে ঐতিহ্যের ঘ্রাণ

মন্দিরের পাশেই রয়েছে এক শতাব্দী পুরোনো মিষ্টির ঐতিহ্য — ‘প্যারা সন্দেশ’।

  • এটি মূলত কালীমাতার ভোগ হিসেবে তৈরি হলেও, বর্তমানে তা নওগাঁ শহরের এক আইকনিক মিষ্টি হিসেবে স্বীকৃত।
  • দুধ ও চিনি দিয়ে প্রস্তুত এই মিষ্টি দেখতে ছোট, গোল এবং অনেকটা শক্ত কিন্তু মুখে দিলে মোলায়েম।
  • পূজা উপলক্ষে বহু মানুষ এই প্যারা সন্দেশ কিনে বাড়িতে নেন ভোগ ও প্রসাদ হিসেবে, আবার দূরের আত্মীয়দের জন্য উপহার হিসেবেও পাঠানো হয়।

এই মিষ্টি শুধু স্বাদের কারণে নয়, বরং মন্দিরকেন্দ্রিক এক ঐতিহ্যবাহী সামাজিক অনুষঙ্গ হিসেবে এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

যুক্ত মিষ্টি ও স্থানীয় শিল্প

‘প্যারা সন্দেশ’ — মন্দিরের পাশে গড়ে ওঠা ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি

নওগাঁর কালীতলার শ্রীশ্রী বুড়া কালীমাতা মন্দিরের পাশে শতবর্ষ ধরে তৈরি হচ্ছে বিশেষ এক মিষ্টি — ‘প্যারা সন্দেশ’। এটি স্থানীয় শিল্প ও ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে বিবেচিত। দুধ ও চিনি দিয়ে তৈরি এই সন্দেশের গঠন একটু শক্ত এবং দেখতে ছোট ছোট প্যারার মতো হওয়ায় এ নাম পড়েছে।

প্যারা সন্দেশ তৈরি হয় খুবই সাবধানে, যেখানে দুধকে ঘন করে আনা হয়, তারপর তা মিষ্টির আকারে ঢেলে ঠান্ডা করা হয়। মিষ্টিটি তার মোলায়েম স্বাদের জন্য বিশেষভাবে জনপ্রিয়। পূজা বা উৎসবের সময় ভক্তরা এই সন্দেশ মন্দিরে ভোগ হিসেবে দেন এবং সেখান থেকেই এটি স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়ে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

এভাবে ‘প্যারা সন্দেশ’ শুধু কালীমাতার প্রতি ভক্তির বহিঃপ্রকাশ নয়, এটি নওগাঁর লোকজ ঐতিহ্য ও অর্থনীতিরও এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

 দর্শনার্থী তথ্য (পরিদর্শন নির্দেশিকা)

মন্দির দর্শনের সময়সূচি ও সুবিধাসমূহ

নওগাঁর কালীতলার শ্রীশ্রী বুড়া কালীমাতা মন্দির প্রাতঃকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকে, সাধারণত সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।
দর্শনার্থীরা প্রতিদিন মন্দিরে এসে আরতি ও পুজার অংশ হতে পারেন। মন্দিরের আশেপাশে কিছু পার্কিং সুবিধা রয়েছে ছোট গাড়ি ও অটোরিকশার জন্য।
ভক্ত ও পর্যটকদের জন্য মন্দিরের পাশে বিশ্রামের জন্য কিছু ছায়াযুক্ত জায়গা এবং শীতল পানীয়ের দোকানও রয়েছে।

ট্যুরিস্টদের জন্য পরামর্শ

  • পূজা ও উৎসবকাল যেমন কালীপূজা, দুর্গাপূজার সময় মন্দিরে দর্শনার্থীর সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়, তাই সেই সময় একটু ধৈর্য সহকারে ভিড় সামলাতে হতে পারে।
  • শান্তি ও আধ্যাত্মিকতা উপভোগ করতে চাইলে, সকাল বেলা বা বিকেল সংক্ষিপ্ত সময়ে আসাই শ্রেয়।
  • বিশেষ করে কার্তিক মাসের অমাবস্যা ও মহাষ্টমী দিনে দর্শন করা হলে পূজার সম্পূর্ণ পরিবেশ উপভোগ করা যায়।
  • পর্যটকরা মোবাইল ফোন ও ক্যামেরার মাধ্যমে ছবি তুলতে পারেন, তবে পূজার সময় পূজারি বা অন্য ভক্তদের ভক্তিভাবের প্রতি সম্মান দেখানো জরুরি।

 নিরাপত্তা ও সম্প্রতি সংঘটিত ঘটনা

কিছুদিন আগেই নওগাঁসহ দেশের কিছু স্থানে কালী মন্দিরগুলোতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো অপ্রিয় ঘটনা ঘটে, যার ফলে স্থানীয় জনগণ মাঝে মাঝে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। নওগাঁর কালীতলার বুড়া কালীমাতা মন্দিরেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে যাতে এই ধরনের অঘটন আর ঘটতে না পারে।

স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনী মন্দির এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি নজরদারি বৃদ্ধি করেছে। মন্দির পরিচালন কমিটি ও স্থানীয় সমাজসেবীরা একযোগে মন্দির পুনরুদ্ধার ও সংস্কারের কাজও শুরু করেছেন, যাতে এই পবিত্র স্থানটি আগের মতোই শান্তি ও ভক্তির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে থেকে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দারা মন্দির রক্ষায় সজাগ থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং সকলের প্রতি বিনম্র অনুরোধ রইল ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষা করার জন্য।

আরো পড়ুন:বারুণেশ্বরী মন্দির (নেত্রকোনা) ঐতিহ্য, উৎসব ও স্থাপত্যের বিস্তারিত বিবরণ

নওগাঁর কালীতলার শ্রীশ্রী বুড়া কালীমাতা মন্দির শুধু একটি ধর্মীয় স্থান নয়, এটি স্থানীয় মানুষের আধ্যাত্মিক বিশ্বাস, ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক ঐকমত্যের প্রতীক। মন্দিরের মাধ্যমে এখানে গড়ে উঠেছে এক শক্তিশালী সামাজিক বন্ধন, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ভক্তি ও সম্মানের মাধ্যমে সংরক্ষিত হয়ে আসছে।

এখন সময় এসেছে এই পবিত্র মন্দিরকে আরও ভালোভাবে সংরক্ষণ এবং উন্নত করে স্থানীয় পর্যটনের গুরুত্ব বাড়ানোর। স্থানীয় প্রশাসন, সমাজকল্যাণ সংস্থা ও জনসাধারণের মিলিত প্রচেষ্টায় এই ঐতিহ্যবাহী স্থানের সংস্কৃতি ও স্থাপত্য রক্ষা করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে, পর্যটক ও ভক্তদের জন্য উন্নত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করলে মন্দিরটি নওগাঁর গর্ব হয়ে উঠবে বিশ্বমানের একটি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে।

মা কালীমাতার আশীর্বাদে এই মন্দির ভবিষ্যতেও শান্তি, সুরক্ষা ও ঐক্যের প্রতীক হয়ে থাকবে — যা আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সমৃদ্ধ ও সুরক্ষিত থাকবে।

আরো পড়ুন: সুগন্ধা শক্তিপীঠের পৌরাণিক ইতিহাস ও ভক্তদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা

পোস্ট টি ভালোলাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না 🙏